ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নিয়মিত ও শৃঙ্খলিত জীবনযাপন। এর মধ্যেই সঠিক খাদ্যাভ্যাস বিশেষ ভূমিকা রাখে। কিন্তু অনেক ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে একটি ভুল ধারণা থাকে—শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট পুরোপুরি বাদ দিলে নাকি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাস্তবে এটি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে।
অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভুল তথ্য দেখে খাদ্যতালিকা থেকে শর্করা পুরোপুরি বাদ দিচ্ছেন। কিন্তু শর্করা আমাদের মূল শক্তির উৎস। তাই এটি বাদ দিলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
শর্করা একেবারে বাদ দিলে কী হতে পারে
-
শরীর দ্রুত চর্বি ভাঙতে শুরু করে, ফলে অতিরিক্ত কিটো অ্যাসিড তৈরি হয়ে রক্তের পিএইচ কমে যায়। এতে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন বা কোমায় যেতে পারেন।
-
পেশি ভেঙে শক্তি তৈরি করতে থাকে, ফলে পেশি শুকিয়ে যায়, দুর্বলতা ও ক্লান্তি বাড়ে, দৈনন্দিন কাজকর্ম প্রভাবিত হয়।
-
শর্করা না খেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। এতে মাথাব্যথা, শরীর কাঁপা, দ্রুত হৃৎস্পন্দন, কথা বলতে অসুবিধা, খিঁচুনি, অজ্ঞান হওয়া, এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও থাকতে পারে।
-
শর্করা বাদ দিলে পানিশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এতে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, ত্বক শুষ্ক হয়ে দাগ পড়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
-
শক্তির ঘাটতির কারণে মাথাব্যথা, দুর্বলতা, খিটখিটে ভাব, মনোযোগ কমে যাওয়া, ঘুম ঘুম ভাব ও স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে।
করণীয়
-
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শর্করা বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই; বরং সঠিক শর্করা বেছে নেওয়াই মূল বিষয়।
-
সারা দিনের খাদ্যতালিকায় ৪০% এর বেশি শর্করা না রাখাই উত্তম।
-
জটিল শর্করা ও কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স–এর খাবার নির্বাচন করুন।
-
শর্করার ভালো উৎস:
-
লাল চাল
-
লাল আটা
-
বার্লি আটা
-
রোল্ড ওটস
-
বিভিন্ন ধরনের ডাল
-
শাকসবজি
-
-
একবারে বেশি না খেয়ে ২–৩ ভাগে ভাগ করে শর্করা খেতে হবে।
-
স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন:
-
বাদাম
-
দুধ
-
টক দই
-
স্যুপ
-
সালাদ
-
চিবিয়ে খেতে হয় এমন ফল
-
প্রয়োজনে পুষ্টিবিদ অথবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
